ঢাকা , রবিবার, ০১ জুন ২০২৫ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে আসল বিজয়ী কি চীন?

আপলোড সময় : ২১-০৫-২০২৫ ১১:২১:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২১-০৫-২০২৫ ১১:২১:১৩ পূর্বাহ্ন
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে আসল বিজয়ী কি চীন?
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক চার দিনের সংঘর্ষ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হলেও, উভয় পক্ষই নিজেদের জয় দাবি করেছে। তবে এই লড়াইয়ের অন্তরালে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পখাত বড় ধরনের সুবিধা পেয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

গত ২২শে ফেব্রুয়ারি পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর জবাবে ভারত ৭ই মে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে 'সন্ত্রাসী অবকাঠামোগুলোর' উপর 'অপারেশন সিন্দুর' নামে হামলা চালায়। 

এরপর উভয় দেশ ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে পাল্টা হামলা চালায়। ভারত যেখানে ফরাসি ও রুশ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে, সেখানে পাকিস্তান চীনের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি জে-১০ ও জে-১৭ বিমান ব্যবহার করে।

ইসলামাবাদ দাবি করে, তারা ছয়টি ভারতীয় বিমান (যার মধ্যে ফ্রান্স-নির্মিত রাফালও রয়েছে) ভূপাতিত করেছে। ভারত এই বিষয়ে নির্দিষ্ট জবাব না দিলেও, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেছে। 

অন্যদিকে, ভারত দাবি করেছে তারা 'সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর' সদর দফতরে হামলা চালিয়ে অন্তত '১০০ জন সন্ত্রাসীকে' হত্যা করেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, পাকিস্তান চীনা জে-১০ বিমান আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে ব্যবহার করে থাকতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, কিছু বিশেষজ্ঞ এটিকে চীনা অস্ত্র শিল্পের জন্য 'ডিপসিক মোমেন্ট' বা বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন। 

চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কর্নেল ঝাও বো-র মতে, এই ঘটনা চীনা অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে এবং এটি তাদের জন্য 'বড় বিজ্ঞাপন'। জে-১০ যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী চীনা কোম্পানির শেয়ারের দামও গত সপ্তাহে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

চীনা সামাজিক মাধ্যমেও এই নিয়ে ব্যাপক উল্লাস দেখা গেছে, যদিও বেইজিং সরকারিভাবে জে-১০ ব্যবহার করে রাফাল ভূপাতিত করার বিষয়ে মন্তব্য করেনি।গবেষক কার্লোটা রিনাউডোর মতে, বাস্তবতার চেয়ে ধারণা বা মনোভাব এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেই হিসেবে চীন এখানে বিজয়ী।

তবে, লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগের মতো অন্য বিশেষজ্ঞরা এই 'শ্রেষ্ঠত্ব' ঘোষণা করার সময় এখনও আসেনি বলে মনে করেন। তাদের মতে, চীনা বিমান সত্যিই রাফালকে টেক্কা দিতে পেরেছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয় এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রাথমিক লক্ষ্য হয়তো পাকিস্তানি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা ছিল না। 

মি. ল্যাডউইগ আরও উল্লেখ করেন যে, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটিসহ ১১টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তেমন প্রচার পায়নি।

চীনের জন্য পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক মিত্র এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে (CPEC) চীনের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। 

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল মনে করেন, এই সংঘর্ষে চীনের ভূমিকা ভারতের নীতিনির্ধারকদের অবাক করেছে। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে চীন চতুর্থ বৃহত্তম রফতানিকারক। অতীতে চীনা অস্ত্রের 'নিম্নমান' ও 'প্রযুক্তিগত সমস্যার' জন্য সমালোচিত হলেও (যেমন মায়ানমারে জেএফ-১৭ বা নাইজেরিয়ায় এফ-৭), এবারের ঘটনা পশ্চিমা দেশগুলোকে চীনা অস্ত্রের সক্ষমতা নতুন করে মূল্যায়নে বাধ্য করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা ভারতের জন্য একটি 'সতর্ক বার্তা'। চীন দেখাতে চায় যে তাদের অস্ত্র পশ্চিমাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম এবং তাদের কাছে আরও উন্নত জে-২০ স্টিলথ ফাইটারও রয়েছে। ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ এবং ২০২০ সালের লাদাখ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতের জন্য দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রয়ের গতি বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। 

সব মিলিয়ে, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সামরিক ফলাফলের চেয়ে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রচার ও সম্ভাব্য বাণিজ্যিক সুবিধা লাভের বিষয়টিই বেশি আলোচনায় এসেছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ